Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

শিরোনাম
বোমা হামলার পরিকল্পনার দায়ে নাফিসের ৩০ বছরের কারাদণ্ড
বিস্তারিত

বোমা হামলার পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রের কারাগারে আটক বাংলাদেশি যুবক কাজী মোহাম্মদ রেজওয়ানুল আহসান নাফিসকে আজ শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালত ৩০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে।

বিবিসির খবরে বলা হয়, ২২ বছর বয়সী নাফিস নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক বোমা মেরে উড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। সম্প্রতি তিনি দোষ স্বীকার করে দেশটির বিচার বিভাগের কাছে এক চিঠি দিয়েছিলেন।

তদন্তকারীরা বলেন, নাফিস বোমা হামলার লক্ষ্যবস্তু ঠিক করেন। এরপর একটি গাড়িতে প্রায় এক হাজার পাউন্ড নকল বিস্ফোরক ভরে ব্যাংকের সদর দরজার সামনে গিয়ে বোমাটি ফুটানোর চেষ্টা করেন। তিনি ভেবেছিলেন, সত্যিকারের বোমা ফুটাচ্ছেন তিনি। নাফিস একটি মোবাইলের মাধ্যমে বোমাটি বিস্ফোরণের চেষ্টা করেন।

নাফিস কার্যত দেশটির গোয়েন্দাদের একটি ফাঁদে পড়েছিলেন। সে দেশের গোয়েন্দারা বিভিন্ন ব্যক্তিকে যাচাই করতে তাঁদের নকল অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে সাহায্য করে।

নাফিসের দুলাভাই তৌফিক আলম সিদ্দিকী প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকারী নাফিসের এক চাচার সঙ্গে তাঁরা যোগাযোগ রাখছেন। তিনি নাফিসের সাজার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

তৌফিক আলম বলেন, ঢাকার যাত্রাবাড়িতে অবস্থানকারী নাফিসের মা-বাবা তাঁর ৩০ বছরের সাজার খবর শুনে ভেঙে পড়েছেন। তিনি বলেন, তাঁরা ভেবেছিলেন, নাফিস যেহেতু নিজের দোষ স্বীকার করেছেন, তাই আদালত তাঁর সাজা কমিয়ে দেবে।

 

বিচারকদের প্রতি চিঠি

বিচারকদের প্রতি লেখা চিঠিতে নাফিস বলেন, তিনি ইসলামি জঙ্গিবাদকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। আমেরিকাকে ভালোবাসার কথা উল্লেখ করে নাফিস নাটকীয়ভাবে বিচারক বরাবর একটি চিঠি দিয়েছেন।

গত ৩১ জুলাই দেওয়া এই চিঠিতে রেজওয়ানুল নাফিস বলেন, বাংলাদেশি প্রেমিকার প্রতারণায় হতাশ হয়ে আত্মঘাতী হতে বাধ্য হয়েছিলেন। নিজের কৃতকর্মের জন্য অনুশোচনা প্রকাশ করে রেজওয়ানুল নাফিস বিচারকের কাছে অনুকম্পা প্রার্থনা করেন।

ব্রুকলিন ফেডারেল আদালতের বিচারক ক্যারল বাগলে এমন বরাবরে দেওয়া চিঠিতে নাফিস বলেন, ‘প্রেমিকার প্রতারণায় আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছিল। ইসলাম ধর্মে নিষিদ্ধ থাকার কারণে আত্মহত্যা করতে পারিনি। সুস্থ চিন্তার ক্ষমতা হারিয়ে আমি পাগল হয়ে পড়ি। একপর্যায়ে জিহাদের মাধ্যমে নিজেকে বলি দেওয়ার বিষয়টি আমার কাছে যুক্তিযুক্ত মনে হয়েছিল।’

যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ভবন উড়িয়ে দেয়ার চেষ্টার অভিযোগে ২০১২ সালের ১৭ অক্টোবর নাফিসকে নিউইয়র্কে গ্রেপ্তার করা হয়। শিক্ষার্থী ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার পর গোয়েন্দাদের পাতা ফাঁদে আটকা পড়েন নাফিস। নকল বিস্ফোরকসহ ফেডারেল ভবন উড়িয়ে দেওয়ার চূড়ান্ত প্রস্তুতির সময় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। দীর্ঘ ১০ মাস তাঁর বিচার-প্রক্রিয়া চলছে। প্রথম থেকে তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করলেও গত ৭ ফেব্রুয়ারি নাফিস আদালতে অপরাধ স্বীকার করেন। মার্কিন কর্তৃপক্ষের প্রস্তাব অনুযায়ী লঘুদণ্ডের প্রত্যাশায় রেজওয়ানুল নাফিস অপরাধ স্বীকার করে নেন।

ঢাকায় নাফিসের পরিবার থেকে বলা হয়েছিল, তিনি যুক্তরাষ্ট্র গোয়েন্দাদের ষড়যন্ত্রের শিকার। যুক্তরাষ্ট্রে আসার আগে বাংলাদেশে তাঁর জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

গত ১৬ নভেম্বর ব্রুকলিনের ফেডারেল আদালতে জুরি বোর্ড নাফিসকে দণ্ড প্রদানের রায় দেন। চূড়ান্ত দণ্ড ঘোষণার জন্য আদালত ৯ আগস্ট তারিখ ধার্য করেন। এর আগে রেজওয়ানুল নাফিসের মানসিক প্রতিবেদন পর্যালোচনার নির্দেশ দেওয়া হয়।

নাফিসের পরিবার থেকে কোনো আইনজীবী নিয়োগ করা হয়নি। যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃপক্ষের নিযুক্ত আইনজীবী হেইডি সিজার নাফিসকে আইনগত সহযোগিতা প্রদান করেন।

নাফিস তাঁর বিচারের চূড়ান্ত রায়ের আগে বিচারক বরাবরে দেওয়া চিঠিতে বলেছেন, ‘কারাগারে থাকা অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে আমার ধারণার বিরাট পরিবর্তন ঘটেছে।’ দীর্ঘ পাঁচ পৃষ্ঠার পত্রে নাফিস আমেরিকার প্রতি তাঁর ভালোবাসার কথা বলেছেন। তিনি লিখেছেন, ইসলামের কোথাও তিনি জঙ্গিবাদের প্রমাণ পাননি। নিজের ব্যক্তি জীবনের হতাশা, প্রেমিকার প্রতারণা এবং জঙ্গি প্রলোভনে জড়িয়ে পড়ার বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন রেজওয়ানুল।

চূড়ান্ত রায়ের আগে বিচারকের কাছে দেওয়া এমন চিঠি নাফিসের প্রতি সহানুভূতিশীল রায় আসতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্র সুপ্রিম কোর্টের ইমিগ্রেশন অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরী প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, নাফিসের এ চিঠি বিচারকের বিবেচনায় নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এ ধরনের বিচারে নাফিসের লঘু দণ্ডে শাস্তি পাওয়ার অবকাশ রয়েছে।

নিউইয়র্ক সময় শুক্রবার সকাল নয়টায় (বাংলাদেশে সময় সন্ধ্যা সাতটা) নাফিসের দণ্ড ঘোষণা হওয়ার কথা। ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাস এবং নিউইয়র্ক বাংলাদেশ কনস্যুলেট অফিস থেকে নাফিসের ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়া হয়েছে। নাফিসের মামলার রায়ের দিন ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাস প্রতিনিধি ও কনসাল জেনারেল মনিরুল ইসলাম আদালতে উপস্থিত থাকবেন বলে জানানো হয়েছে।

 

বিচারক বরাবর নাফিসের চিঠির অনুলিপি  

ছবি
ডাউনলোড